ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় জেনে নিন
আমাদের অনেকের শরীরে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা অনেক পরিমাণে বেরে যায়। যার কারণে ডায়ালাইসিস করতে হয়। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায় ও ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনি যদি ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায় ক্রিয়েটিনিন কমানোর ব্যায়াম সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃআপনি যদি আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত থাকেন তাহলে আপনি কি কি খাবারে ক্রিয়েটিনিন বাড়ে, ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ, ক্রিয়েটিনিন কমানোর ঔষধ, ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন এখন বেশি দেরি না করে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।
কি কি খাবারে ক্রিয়েটিনিন বাড়ে
যেই সকল ব্যাক্তিগণ ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদেরকে অবশ্যই ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ক্রিয়েটিনিন এটি হলো একটি কিডনি রোগ। যাদের ডায়বেটিস রয়েছে তাদের প্রবল প্রভাব পরে প্রথমে চোখে তারপরে কিডনিতে। আর পরবর্তিসময়ে এটি হার্টের ওপর ও অনেক প্রভাব ফেলে।
আরো জানুনঃ শ্বাসকষ্ট হলে কি ঔষধ খেতে হবে
রক্তে যদি ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায় তাহলে কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এটি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আর এটিই যদি কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাহলে আমাদের শরীরের অনেক বিপর্জয় ঘটবে। তাই চলুন এখন আমরা জেনে নেই কি কি খাবারে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা বেড়ে যায়।
প্রটিন জাতীয় খাবারঃ ক্রিয়েটিনিন সমস্যা ধরা পরার পরেই আমরা অনেকে প্রটিন জাতীয় খাবার খাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দেই। যেটা মোটেও ঠিক নয়। তাই আমাদের সকলকে কিডনির সমস্যা বুঝে তারপর প্রটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। আর এই কার্যক্ষমতা কতটুকু পরিমাণে রয়েছে তা রক্ত পরিক্ষা করার মাধ্য বুঝা সম্ভব।
যদি রক্তে GFR< 60 হয়, তাহলে আপনি প্রটিন দিনে ০.৮/কেজি ওজন হারে খেতে পারবেন। এর অর্থ হলো ৬০ কেজি ওজনের মানুষ দিনে ৪৮ গ্রাম প্রটিনযুক্ত খাবার খেতে পারবেন। আর আপরদিকে লক্ষনিয় আপনার যদি কিডনির সমস্যা থেকেও থাকে তাহলে প্রতিদিন ১টা করে ডিম, দুপুর এবং রাতের খাবারে ২ টুকরা মাছ অথবা মাংস, ৩ বা ৪ টেবিল চামচ ডাল খেতে পারবেন। তবে এখানে অবশ্যই আপনাকে গরু বা খাসির মাংসের পরিবর্তে মুরগির মাংস ও মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
ফল ও শাকসবজিঃ কিডনি রোগীদের ফল ও শাকসবজি খাওয়া যে একদমই নিষেধ এই কথা সঠিক নয়। যদি কারো রক্তে GFR< 30 এর কম হয় তাহলে তাকে পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার অবশ্যই খেতে হবে। যে সকল খাদ্যে পটাশিয়াম এর পরিমাণ অনেকতাই বেশি থাকে তা হলোঃ
- কলা
- খেজুর
- ডাবের পানি
- শুকনা ফল
- টমেটো
- আলু
- শসা
- পালংশাক
- ফলের রস
আর যে সকল খাবার পটাশিয়ামের মাত্রা কিছুটা কম থাকে সেগুলো খাবার পরিমাণ মতো আপনি খেতে পারবেন। সেই সকল খাবারের তালিকাগুলি নিম্নে দেওয়া হলো।
- আপেল
- আঙুর
- পেয়ারা
- নাশপাতি
- তরমুজ
- জাম
আপনি যদি ক্রিয়েটিনিন রোগে ভোগে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে। আর যদি আপনার রক্তে GFR< 60 এর কম হয় তাহলে দিনে ১,০০০ গ্রাম অর্থাৎ ১ কেজির বেশি ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। আর যদি পারেন তাহলে প্রতি ৬মাস অন্তর অন্তর রক্তের ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন - ডি এর মাত্রা পরীক্ষা করে তারপর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে পারেন।
ক্রিয়েটিনিন কেন বাড়ে
কিডনিতে কোন সমস্যা দেখা দিলে কিডনি তার স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তখন অতিরিক্ত রক্ত কিডনি দিয়ে যখন অতিবাহিত হয় তখন রক্ত থেকে ক্রিয়েটিনিন আলাদা হতে পারে না। যার ফলে এই ক্রিয়েটিনিন রক্তে থেকেই যায়। যার দ্বারা রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যয়।
আবার অন্যভাবে বলা যায় যে, ক্রিয়েটিনিন আমাদের শরীরের মাংস পেশির ফসফেট ভেঙে উৎপাদন হয়। এটা তৈরি পেশির ভর অথবা ঘনত্বে ওপর নির্ভর করে থাকে। যখন মানবশরীরের কিডনি ঠিক কতো কাজ করে না তখনই ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেরে যায়। তাই আমাদের এই বিষয় বুঝতে হবে।
ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ
ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলে কিছু কিছু লক্ষণের প্রকাশ হয়। যেগুলি থেকে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার শরীরে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তাহলে চলুন এখন আমরা সকলেই জেনে নেই ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলে কি কি লক্ষণের দেখা দিতে পারে।
- ঘন ঘন প্রস্রাব
- প্রস্রাবে ব্যথা অনুভুত হতে পারে।
- প্রস্রাবে দূর্গন্ধ হতে পারে।
- প্রস্রাবে অতিরিক্ত পরিমাণে ফেনা দেখা দিতে পারে।
- চুলকানি
- বমি বমি ভাব হতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট অনুভূত হওয়া।
- খাওয়ার প্রতি রুচি কমে যেতে পারে।
- পা ফুলে যেতে পারে।
- শরীর অতিরিক্ত পরিমাণে ফুলে যেতে পারে।
- ক্রিয়েটিনিন কমানোর ব্যায়াম
ক্রিয়েটিনিন কমানোর জন্য সবথেকে কার্যকরি উপায় হচ্চে যোগ ব্যায়াম। আপনি চাইলে ডাক্তারের পরামর্শকৃত ঔষধের সাথে যৌগ ব্যায়াম করতে পারেন। তাতে করে আপনি খুব দ্রুত সেরে উঠবেন। তাহলে চলুন এখন এই বিষয়ে কিছু উদাহরন দেখে নেওয়া যাক।
তিন জন মানুষ ছিলেন, যাদের রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অনেক পরিমাণে বেশি ছিলো। তারা হলেন বেলঘরিয়ার মৌসুমী চক্রবর্তী। তার ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ছিলো ৬। আরেকজন ছিলেন নাম তার আশিসকান্তি দত্ত রায়। যার মাত্রা ছিলো ৩.৩৫। এদের সাথে আরো একজন ছিলেন, তার নাম হলো অশেষ মুখোপাধ্যায়। ইনির মাত্রা ছিলো ১০.৩।
পূর্বে তাদের এত মাত্রা থাকার পরেও তাদের যোগ ব্যায়াম করার কারণে তাদের ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা এখন বর্তমানে বেলঘরিয়ার মৌসুমী চক্রবর্তীর মাত্রা এখন ০.৯। আশিসকান্তি দত্ত রায় এর এখন বর্তমানে মাত্রা ২.১৫। এবং অশেষ মুখোপাধ্যায়ের মাত্রা ১.৫।
আরো জানুনঃদাঁতের ব্যাথার ট্যাবলেট কোনটি
তাদের যোগ ব্যায়ামের কারণে অনেক পরিমাণে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা কমে গিয়েছে। যা আপনি উপরে দেখে আশা করছি বুঝতে পেরেছেন। তাই ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা কমাতে যোগ ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। আশা করছি আপনি উক্ত বিষোয় সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায়
ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে বেড়ে গেলে তা আমাদে শরীরের জন্য এক বিদ্রুপ প্রভাব ফেলে। তাই সকল ডাক্তারগণই তার রোগীদের এই মাত্রা কমানোর জন্য পরামর্শ দেন। তাহলে চলুন এখন আমরা জেনে নেই কিভাবে আমাদের শরিরের ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কমানো যাবে।
- রেড মিট অর্থাৎ গরুর মাংস, মহিষের মাংস, খাসির মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- অ্যাপল সিডার ভিনেগার প্রতিদিন পান করুন। তার জন্য এক গ্লাস গরম পানিতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার ভালোভাবে মিশিয়ে পান করুন।
- প্রতিদিন এক টুকরো দারুচিনি খাওয়ার চেষ্টা করুন। অথবা আপনি যেকোন ধরণের পানীয় পানিয়র সথে প্রতিদিন আধা চামচ দারু চিনির গুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন।
- প্রতিদিন ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- অতিরিক্ত পরিশ্রম করা বন্ধ করুন।
- যারা ক্রিয়েটিন সাপ্লিমেন্ট নিয়োমিত ব্যাবহার করছেন তারা ক্রিয়েটিন সাপ্লিমেন্ট ব্যাবহার করা বন্ধ করুন।
- অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খাওয়া বন্ধ করুন।
- পটাসিয়াম, ফসফরাস এবং সোডিয়ামযুক্ত খাবার প্রতিদিন নিয়োমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে।
ক্রিয়েটিনিন কমানোর ঔষধ
ক্রিয়েটিনিন কমানোর জন্য কিছু ঔষধ রয়েছে। যা ব্যাবহারের মাধ্যমে আপনি প্রায় অনেকটাই সুস্থ হয়ে যাবেন। তবে আপনি যদি ক্রিয়েটিনিন কমাতে চান তাহলে অবশ্যই তার পূর্বে আপনাকে জানতে হবে আপনার শরীরে যে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তার মূল কারণ কি।
আর যদি যদি বুঝতে পারেন শরীরে ইলেকট্রলাইট আপনার শরীরে কম বা বেশি হওয়ার কারণে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কম বা বেশি হচ্ছে তাহলে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসা করাতে হবে। আর তা না হলে আপনি নিম্নক্ত ঔষধ গুলি দেখতে পারেন।
- কিডনিতে সোডিয়ামের সল্পতা হলে Sodisalt Tablet খাবেন।
- ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেশি হলে Febus 40mg খাবেন।
- যদি প্রতিদিনের প্রস্রাবের পরিমাণ কম হয় অথবা আটকে যায় তাহলে Frulac 20mg খেতে পারেন।
- যদি ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অত্যাধিক বেড়ে যায় তাহলে Ceftriaxone 1gm Inj দিনে ১ বার করে ৭ দিন শীরা পথে দিতে হবে।
- কিডনিতে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে Dicaltrol 0.25 mg ক্যাপসুল ১ টি করে খেতে হবে।
- তবে উক্ত সকল ঔষধ ব্যাবহারে পূর্বে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়
ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় অথবা আদৌ ডায়ালাইসিস করতে হয় কি না সেটা অনেকেই জানেন না। তাহলে চলুন এখন জেনে নেই। ইন্ডিয়ার ডাক্তার পতিন সেন গুপ্ত বলেছেন ক্রিয়েটিনিন হলে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পরেন ডায়ালাইসিস করতে হবে বলে।
আসলে ডায়ালাইসিস করার জন্য অনেকগুলি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তার পরে করতে হয়। মনে করেন এখন আপনার ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ ১.২ জানতে পারলেন। এখন আপনাকে অনেকেই বলছেন আপনার কিডনির ডায়ালাইসিস করতে হবে। আপনার কিডনি খারাপ হয়ে গিয়েছে। এই কথা শুনে আপনার অবশ্যই মন খারাপ হতে পারে।
আপনি এই সকল কথা না শুনে সরাসরি একজন অভিজ্ঞ ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ একজন ভালো ডাক্তার অনেকগুলি টেস্ট করার পরে অনেক পরামর্শ প্রদান করার পরে তার পরে অনেক চিন্তা ভাবনা করে তার পরে ডাক্তারেরা ডায়ালাইসিসের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
এখন এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো যদি শিশুদের রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা 2mg/dl হয়ে থাকে। এবং একজন প্রাপ্ত বয়ষ্কদের 5mg/dl হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে ডাক্তারেরা ডায়ালাইসিস করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আশা করছি আপনি উক্ত বিষয় সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। আর আপনার কোন মন্তব্য থাকলে তা কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়ে দিতে পারেন।
শেষ কথা
এই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে আমি ক্রিয়েটিনিন কমানোর বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার পর যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন এবং নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। সর্বশেষ সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর আপনার মতামত কমেন্টে জানাতে বলবেন না ধন্যবাদ।